
রাশিয়ার মস্কোতে বিশ্বকাপ ফুটবল এর ড্র অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া ৩২টা দল নিজেদের গ্রুপ সম্পর্কে জেনে গেল। ৮টি গ্রুপে ভাগ হয়ে এই ৩২টা দলই সামনের বছর বিশ্বকাপ ফুটবল এ লড়বে, ফুটবলবিশ্বে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার বাসনা নিয়ে, কে কার থেকে বেশী শক্তিশালী, সেটা প্রমাণ করার তাড়না নিয়ে।
পুতিন, পেলে, ম্যারাডোনা, লিনেকার, কাফু, ব্লাঁ, পুয়োল, ক্যানাভারো, কানু, ম্যাথাউস, ইতো – সহ ফুটবল বিশ্বের সকল তারকার মেলা বসেছিল যেন এই অনুষ্ঠানে। গ্যারি লিনেকারের প্রাণবন্ত উপস্থাপনা দিয়েছিল অনুষ্ঠানে নতুন এক মাত্রা। সবশেষে ৩২টা দলকে আটটি গ্রুপে ভাগ করে দেওয়ার মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠানটি।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন দল কোন কোন গ্রুপে পড়লো!
আর এই গ্রুপবিভাগের মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে গেল বিশ্বকাপ ফুটবল এর কাউন্টডাউন – বিশ্বকাপের কাউন্টডাউন।

গোল্লাছুট ডটকমে প্রকাশিত হচ্ছে আট গ্রুপের প্রত্যেকটা গ্রুপ সম্পর্কে আলোচনা। কোন গ্রুপ বেশী শক্তিশালী, কোন গ্রুপ অপেক্ষাকৃত সহজতর, প্রত্যেক গ্রুপ থেকে কোন কোন দলের পরবর্তী রাউন্ডে উন্নীত হবার সম্ভাবনা হয়েছে, দলগুলোর শক্তিমত্তার তুলনামূলক আলোচনা ইত্যাদি আলোচনা করা হচ্ছে বাংলা ভাষার সর্বপ্রথম খেলাকেন্দ্রিক স্পোর্টসব্লগ – গোল্লাছুট ডটকমে।
আজকের আলোচনা গ্রুপ ‘ডি’ নিয়ে।
গ্রুপ ‘ডি’তে আছে ক্রোয়েশিয়া, আইসল্যান্ড, নাইজেরিয়া ও দুইবারের বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনা
- ফিফা র্যাংকিং : ৪
- কোচ : হোর্হে সাম্পাওলি
- অধিনায়ক : লিওনেল মেসি (স্ট্রাইকার)
- বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ১৭ বার
- সর্বোচ্চ অবস্থান : চ্যাম্পিয়ন (১৯৭৮, ১৯৮৬)
- যে ফর্মেশান/স্টাইলে খেলে : ৩-৪-৩
- গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় : লিওনেল মেসি (স্ট্রাইকার – বার্সেলোনা), পাবলো ডিবালা (স্ট্রাইকার – জুভেন্টাস), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (উইঙ্গার – প্যারিস সেইন্ট জার্মেই), মাউরো ইকার্দি (স্ট্রাইকার – ইন্টার মিলান), লুকাস বিলিয়া (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – এসি মিলান), সার্জিও রোমেরো (গোলরক্ষক – ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকলাস ওটামেন্ডি (সেন্টারব্যাক – ম্যানচেস্টার সিটি)

স্মরণকালের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষ রাউন্ডে জিতেই বিশ্বকাপে নিজেদের জায়গা পাকা করেছে আর্জেন্টাইনরা – একরকম লিওনেল মেসির উপর ভর করেই। এই লিওনেল মেসির জন্য এবারই শেষ সুযোগ – আর্জেন্টিনার স্বর্ণালী প্রজন্মের হাতে একটা বিশ্বকাপ তুলে দেওয়ার। এবার না হলে মেসিকে হয়তোবা ক্যারিয়ার শেষ করতে হবে বিশ্বকাপহীনভাবেই। কিন্তু আর্জেন্টিনা কি পারবে বিশ্বকাপ জিততে? বাস্তবতা বলছে – না। কোচ হোর্হে সাম্পাওলিকে এখনো অনেক কাজ করতে হবে এই স্কোয়াডটাকে বিশ্বকাপজয়ী বানানোর জন্য।
নাইজেরিয়া
- ফিফা র্যাংকিং : ৫০
- কোচ : গার্নোত রোর
- অধিনায়ক : জন ওবি মিকেল (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার)
- বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ৭ বার
- সর্বোচ্চ অবস্থান : দ্বিতীয় রাউন্ড (১৯৯৪, ১৯৯৮, ২০১০, ২০১৪)
- যে ফর্মেশান/স্টাইলে খেলে : ৪-৩-৩
- গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় : ভিক্টর মোসেস (উইঙ্গার/উইংব্যাক – চেলসি), অ্যালেক্স ইওবি (উইঙ্গার – আর্সেনাল), জন ওবি মিকেল (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – তিয়ানজিং টেডা), উইলফ্রিয়েড এনদিদি (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – লেস্টার সিটি), আহমেদ মুসা (স্ট্রাইকার – লেস্টার সিটি), হেনরি ওনিয়েকুরু (স্ট্রাইকার – আন্ডারলেখট), কেলেচি ইহেয়ানাচো (স্ট্রাইকার – লেস্টার সিটি), মোসেস সিমোন (উইঙ্গার – জেন্ট), ওডিওন ইগহালো (স্ট্রাইকার – চাংচুন ইয়াতাই), আইজ্যাক সাক্সেস (স্ট্রাইকার – ওয়াটফোর্ড)

নতুন কোন গার্নোর রোর আসার পর থেকেই নিজেদের খুঁজে পেয়েছে যেন সুপার ঈগলস রা। জার্মান এই কোচ দলে এনেছেন স্থিরতা। পরপর দুটো আফ্রিকান কাপ অফ নেশনসে সুযোগ না পাওয়া নাইজেরিয়াকে এই জার্মান কোচ গড়ে তুলছেন তরূণদের নিয়ে। নিকট অতীতে নাইজেরিয়ার আক্রমণভাগে এত প্রতিভাবান খেলোয়াড় ছিলেন বলে মনে পড়েনা, যা এখন আছে। মোসেস, ইওবি, মুসা, ইহেয়ানাচো, ইগহালো, সাক্সেস, সিমোন, ওনিয়েকুরু – আক্রমণভাগে তরুণ প্রতিভার ছড়াছড়ি। পুরনো দিনের সেনানি দলের অধিনায়ক জন মিকেল ওবি মিডফিল্ডেও পেয়েছেন তরুণ উইলফ্রিয়েড এনদিদির মত খেলোয়াড়ের সাহচর্য। একটু কঠিন গ্রুপে পড়েছে, নাহয় নির্দ্বিধায় বলা যেত দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠছে তারা।
ক্রোয়েশিয়া
- ফিফা র্যাংকিং : ১৭
- কোচ : জলাতকো দালিচ
- অধিনায়ক : লুকা মডরিচ
- বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ৫ বার
- সর্বোচ্চ অবস্থান : তৃতীয় (১৯৯৮)
- যে ফর্মেশান/স্টাইলে খেলে : ৪-২-৩-১
- গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় : লুকা মডরিচ (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – রিয়াল মাদ্রিদ), ইভান পেরিসিচ (উইঙ্গার – ইন্টার মিলান), ইভান রাকিটিচ (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – বার্সেলোনা), মাতেও কোভাচিচ (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – রিয়াল মাদ্রিদ), মারিও মান্দজুকিচ (স্ট্রাইকার – জুভেন্টাস), নিকোলা ভ্লাসিচ (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – এভারটন), মার্সেলো ব্রোজোভিচ (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – ইন্টার মিলান), অন্দ্রে ক্রামারিচ (স্ট্রাইকার – হফেনহেইম), মিলান বাদেল (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – ফিওরেন্টিনা), মার্কো পিয়াকা (উইঙ্গার – জুভেন্টাস)

১৯৯৮ সালে একটা স্বপ্নের মত বিশ্বকাপ কাটায় ক্রোয়েশিয়া। ডেভর সুকারে চড়ে সে বিশ্বকাপ ফুটবল এ তৃতীয় হওয়া ক্রোটদের আরেক স্বর্ণালী প্রজন্ম আসে ২০১৪ বিশ্বকাপের সময়। কিন্তু এই সোনালী প্রজন্মের খেলোয়াড়েরা কখনই নিজেদের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। প্রথম রাউন্ডেই বাদ হয়ে যায় তারা। সেই স্বর্ণালী প্রজন্মের অধিকাংশেরই বয়স এবার ২৯ এর বেশী, তো মোটামুটি বলা যেতে পারে এবারই এই মডরিচ-রাকিটিচ-কোভাচিচ-মান্দজুকিচ-পেরিসিচ-সুবাসিচদের শেষ সুযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিছু করে দেখানোর।
আইসল্যান্ড
- ফিফা র্যাংকিং : ২২
- কোচ : হেইমির হালগ্রিমসন
- অধিনায়ক : অ্যারন গুনারসন
- বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ১ বার
- সর্বোচ্চ অবস্থান : –
- যে ফর্মেশান/স্টাইলে খেলে : ৪-৪-২
- গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় : গিলফি সিগুর্ডসন (অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার – এভারটন), র্যাগনার সিগুর্ডসন (সেন্টারব্যাক – রুবিন কাজান), ইয়োন বার্গ গুডমন্ডসন (উইঙ্গার – বার্নলি), অ্যালফ্রেড ফিনবোগাসন (স্ট্রাইকার – অগসবুর্গ), এমিল হালফ্রেডসন (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – উদিনেসে), অ্যারন গুনারসন (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – কার্ডিফ সিটি), হোরদুর বিয়োর্গভিন ম্যাগনাসান (উইঙ্গার – ব্রিস্টল সিটি)

গত ইউরোতে প্রথমবারের মত খেলতে এসেই সবাইকে চমকে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা মাত্র ৩ লাখ ৩৭ হাজার লোকের আইসল্যান্ড এবার প্রথমবারের মত খেলতে আসছে বিশ্বকাপ ফুটবল এ। গতবার ইউরোতে ইংল্যান্ডের মত দলকে হারিয়ে দেওয়া আইসল্যান্ড এবার বিশ্বকাপেও চমক দেখাতে পারে – এ কথা ফেলে দেওয়ার মত নয়। উজ্জীবিত আইসল্যান্ডকে তাই আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া বা ক্রোয়েশিয়াকে হারাতে দেখলে চমকে উঠবেন না যেন!
গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যে যে উঠতে পারে – ১. আর্জেন্টিনা ২. আইসল্যান্ড