
৪২ টা গ্রুপ ম্যাচ ! ৪ টা কোয়ার্টার ! ২টা সেমি ! ১ টা বড় ফাইনাল !
বিশ্বকাপের ফিকচারের স্ট্রাকচারটা এমনই । বিশ্বকাপের আমেজটা শুরু হয় ফিকচারটা হাতে পাইলেই । আর তার সাথে সাথে আরেকটা কাজও আমরা করে ফেলি চট করে । একদম উপর-নিচ স্ক্রল করে আগে বাংলাদেশের খেলার ডেইট আর টাইমটা দেখে নেই । তারপরে, বড় বড় ম্যাচগুলি আর তাদের টাইম টেবিল একবার চেক দেই !
আজকে ভারত আর আমিরাতের ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের শেষ হয়ে গেল ২১ টা ম্যাচ । তারমানে প্রথম রাউন্ডের অর্ধেক ম্যাচ শেষ ! বাকি আরো ২১ টা ।
একদম ছোটবেলা থেকেই সবার চাইতে ক্রিকেটের পছন্দ-অপছন্দ ভিন্ন দিকে ঘুরত । সবাই রিকি পন্টিং এর অস্ট্রেলিয়াকে একদম ভিতর থেকে ঘৃণায় ভরিয়ে দিলেও কেনো জানি না বাংলাদেশের পরেই ওদের ভালো লাগত। সবাই চার ছক্কা দেখতে চাইত, আমার কাছে ব্রেট লি বা শেন বন্ড টাইপের কেউ সাঁই সাঁই করে বাউন্সার মারে- এই সিন দেখতে ভালো লাগত বেশি । সেই হিসাবে লো স্কোরিং থ্রিলার ক্রিকেটে আমার সবচাইতে পছন্দের জিনিস ! নামটা যখন নিয়েই নিলাম, তাহলে এই বিশ্বকাপের এখনো পর্যন্ত ১৪-১৫ দিনে হয়ে যাওয়া লো স্কোরিং থ্রিলারগুলার কথাই আগে বলি ।
১৮০ রান বা ২১০ রানের টার্গেট । আপনি যখন টার্গেট দেখেই টিভি অফ করে দিয়েছেন, তখনই ক্রিকিনফোতে ঢুঁ মেরে দেখলেন পরে ব্যাট করা দলেরও ১০ রানে নাই ৩ উইকেট ! দিনশেষে এই পুঁজির ম্যাচই গেলো ৪৮ ওভার বা ৪৯ ওভার পর্যন্ত ! কিংবা এই রান চেইজ করতে করতেই ৮ উইকেট বা ৯ উইকেট নাই ! বা এমনও হয় , যে ঐ রানটা একদম কাছে যাইয়া চেইজই করতে পারলো না । এইগুলি হলো লো স্কোরিং থ্রিলার !
এই বিশ্বকাপ সেইভাবে লো স্কোরিং থ্রিলার পেয়েছে মোটে ২ টা । তার মধ্যে একটা আবার আজকে একদম ২০তম ম্যাচে এসে দুই স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড এর ম্যাচে । এই ম্যাচটা লো স্কোরিং হওয়ায় সবাই একটু বেশিই ধন্ধে পড়ে গেছে । দুনিয়ার অন্য জায়গার চেয়ে নিউজিল্যান্ডের মাঠগুলো তুলনামূলকভাবে ছোটো ! মাঠ বড় ছোট বাদ দিন, ম্যাককুলাম-ম্যাক্সওয়েল-ওয়ার্নার-ফিঞ্চ-টেলর টাইপে কচুকাটা টাইপ ব্যাটার থাকলে মাঠের সাইজে কি আসে যায় ? ম্যাচের স্টার্টটাও গেছে একদম চাওয়ামত । ঝড়ো স্টার্ট ! তারপরে একজন ট্রেন্ট বোল্ট, টপাটপ উইকেট আর সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া টার্গেট রাখতে পারলো মাত্র ১৫২ রানের । এইবার ম্যাককালাম তার ফ্যাশনেই শুরু করলেন, কিন্তু ঐখানে একটা ট্রেন্ট বোল্ট থাকলে ম্যাচ জমাইতে এইখানে একটা স্টার্ক থাকবে না সেইটা কীভাবে হয় ? ম্যাচটা জমেও গেলো । তবে রেজাল্টটা ফাইনালি আসলো ঐটাই । কোনটা ? যেটা আপনি অস্ট্রেলিয়া ইনিংস শেষ হবার পরেই ধরে নিয়েছিলেন । ১ উইকেটে জিতলো নিউজিল্যান্ড !

আরেকটা ছিলো আফগানিস্তান আর স্কটল্যান্ডের ম্যাচ ! স্কটল্যান্ডের দেওয়া ২১১ রানের টার্গেটটা এই বিশ্বকাপের রেওয়াজ অনুযায়ী আরামসে পার হওয়ার কথা আফগানিস্তানের । কিন্তু নিউজিল্যান্ড এর সাথে ভালো বোলিং করে যেই মেসেজটা স্কটল্যান্ড অর্ধেক দিয়ে রাখছিলো, সেইটা আর কি পুরা করল আফগানদের সাথে ! কিন্তু ৯৭ রানে ৭ উইকেট ফেলে দিয়েও এক শেনওয়ারির জন্যে জয়ের সন্দেশটা চাখতে পারে নাই স্কটল্যান্ড ।
বিশ্বকাপের এই ২১ ম্যাচ পরে এসে আরেকটা কথা বলতেই হবে । মেগাম্যাচ বলতে যা বুঝায়, সেই টাইপের ম্যাচ এখনো পার হইছে ৩টা । অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড, ভারত-পাকিস্তান, ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা !
অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের ম্যাচের কথা তো বললামই !
এর মধ্যে আর বাকি ভারতের দুইটা ম্যাচকে আমি ফ্লপ বলবো ! আপনি রাগতে পারেন , বলতে পারেন, “ভাই ফ্লপ কই ? কোহলি এত ক্লাসি একটা ইনিংস খেললো , ধাওয়ান দেড়শোর কাছাকাছি একটা বড় হান্ড্রেড মারি দিলো স্টেইন মর্কেলের সাথে ?”…আমি বলবো , “ভাই গেলো বিশ্বকাপের ভারত-ইংল্যান্ডের ম্যাচের মতো হাইস্কোরিং থ্রিলার কই ?”…
ম্যাচগুলা থ্রিল দিতে পারে নাই । ভারত আগে ব্যাট করে বড় রান করছে । তারপর দুই আনপ্রেডিক্টেবল টীম দক্ষিণ আফ্রিকা আর পাকিস্তান সময়মতো বড্ড রহস্যজনকভাবে ভাঁজ খেয়ে গেছে ।

এর বাইরে যদি জিজ্ঞাসা করেন বিশ্বকাপের ফার্স্ট ২১ম্যাচ আসলে কি পেলো, সেক্ষেত্রে কয়েকটা কথা আলাদা করে বলতে হবে । ফার্স্টলি, আয়ারল্যান্ড আর জিম্বাবুয়ের খেলা । আয়ারল্যান্ড ভালো কিছু করবে , এইটা ক্রিকেটের খোঁজখবর যারা রাখে তারা কমেবেশি জানত । কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে হোয়াটমোরের জিম্বাবুয়ের শুরুটা মজা দিয়েছে ভালোই । এর বাইরে আরব আমিরাতের কথাও আলাদা করে বলতে হবে । সবাই একদম ধরেই নিছিলো “বি গ্রুপের ” সবাই এই একটা দলের সাথে খেলার আগেই ২ পয়েন্ট করে পেয়ে যাবে । বাস্তবে জিম্বাবুয়ে আর আয়ারল্যান্ড দুইটারই একদম এইপার-ঐপার করে দিছে আমিরাত । জিততে পারে নাই ! কিন্তু সেরকম ভাবেই খেলছে যাতে টুর্নামেন্টের গ্ল্যামার বাড়ে !
এর বাইরে আরো কথা বলতে গেলে শেষের দিকের ওভারগুলোয় বেশিরভাগ ম্যাচেই লাগামছাড়া রান উঠার কথাটা বলতে হবে । এর ক্রেডিট ব্যাটসম্যানদের তো অবশ্যই দিতে হবে , তার বাইরেও বলতে হবে টি টোয়েন্টির বিস্তারের কথা !
মোটামুটি নিশ্চিত যে বিশ্বকাপে দল কমছে । ১০ দলের টুর্নামেন্ট হওয়ার ব্যাপারটাও প্রায় নিশ্চিত । আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে আর আমিরাতের খেলা কি একটু হলেও কনফিউশনে ফেলে দেবে আইসিসিকে ?