
রাশিয়ার মস্কোতে বিশ্বকাপ ফুটবল এর ড্র অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া ৩২টা দল নিজেদের গ্রুপ সম্পর্কে জেনে গেল। ৮টি গ্রুপে ভাগ হয়ে এই ৩২টা দলই সামনের বছর বিশ্বকাপ ফুটবল এ লড়বে, ফুটবলবিশ্বে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার বাসনা নিয়ে, কে কার থেকে বেশী শক্তিশালী, সেটা প্রমাণ করার তাড়না নিয়ে।
পুতিন, পেলে, ম্যারাডোনা, লিনেকার, কাফু, ব্লাঁ, পুয়োল, ক্যানাভারো, কানু, ম্যাথাউস, ইতো – সহ ফুটবল বিশ্বের সকল তারকার মেলা বসেছিল যেন এই অনুষ্ঠানে। গ্যারি লিনেকারের প্রাণবন্ত উপস্থাপনা দিয়েছিল অনুষ্ঠানে নতুন এক মাত্রা। সবশেষে ৩২টা দলকে আটটি গ্রুপে ভাগ করে দেওয়ার মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠানটি।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন দল কোন কোন গ্রুপে পড়লো!
আর এই গ্রুপবিভাগের মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে গেল বিশ্বকাপ ফুটবল এর কাউন্টডাউন – বিশ্বকাপের কাউন্টডাউন।

গোল্লাছুট ডটকমে প্রকাশিত হচ্ছে আট গ্রুপের প্রত্যেকটা গ্রুপ সম্পর্কে আলোচনা। কোন গ্রুপ বেশী শক্তিশালী, কোন গ্রুপ অপেক্ষাকৃত সহজতর, প্রত্যেক গ্রুপ থেকে কোন কোন দলের পরবর্তী রাউন্ডে উন্নীত হবার সম্ভাবনা হয়েছে, দলগুলোর শক্তিমত্তার তুলনামূলক আলোচনা ইত্যাদি আলোচনা করা হচ্ছে বাংলা ভাষার সর্বপ্রথম খেলাকেন্দ্রিক স্পোর্টসব্লগ – গোল্লাছুট ডটকমে।
আজকের আলোচনা গ্রুপ ‘ই’ নিয়ে।
গ্রুপ ‘ই’তে আছে সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা, সার্বিয়া ও বিশ্বকাপের সফলতম দল – ব্রাজিল।
ব্রাজিল
- ফিফা র্যাংকিং : ২
- কোচ : তিতে
- অধিনায়ক : একেক সময়ে একেকজন
- বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ২১ বার
- সর্বোচ্চ অবস্থান : চ্যাম্পিয়ন (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪, ২০০২)
- যে স্টাইল/ফর্মেশানে খেলে : ৪-১-৪-১
- গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় : নেইমার (উইঙ্গার – প্যারিস সেইন্ট জার্মেই), ফিলিপ্পে কউতিনহো (অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার – লিভারপুল), ক্যাসেমিরো (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – রিয়াল মাদ্রিদ), গ্যাব্রিয়েল জেসুস (স্ট্রাইকার – ম্যানচেস্টার সিটি), ডগলাস কস্টা (উইঙ্গার – জুভেন্টাস), মার্সেলো (লেফটব্যাক – রিয়াল মাদ্রিদ)
পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দল এবারেও আসছে শিরোপার লক্ষ্য নিয়েই। এক বছর আগে দলটার দায়িত্বে আসা তিতের কোন নির্দিষ্ট কোন অধিনায়ক নেই। দলের সবাই একবার একবার করে অধিনায়ক হচ্ছেন। দলের অবিসংবাদিত সুপারস্টার অবশ্যই নেইমার। গতবার সেমিফাইনাল ইনজুরির কারণে না খেলতে পারার জন্য এবার নেইমারের জিগীষাটা অবশ্যই বেশী। সাধারণত একই খেলোয়াড়দের উপরে ভরসা রাখা তিতের হাতে মূল একাদশের বাইরে সেরকম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়ও নেই, তবে মূল একাদশই বিশ্বকাপ অর্জন করার যোগ্য, যদি তিতের অধীনে ব্রাজিল গত ২০ ম্যাচ যেভাবে খেলছে সেরকম খেলতে থাকে।
সার্বিয়া
- ফিফা র্যাংকিং : ৩৭
- কোচ : ম্লাদেন ক্রস্টাইচ
- অধিনায়ক : ব্রানিস্লাভ ইভানোভিচ (সেন্টারব্যাক/রাইটব্যাক)
- বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ২ বার
- সর্বোচ্চ অবস্থান : গ্রুপপর্ব (২০১০)
- যে স্টাইল/ফর্মেশানে খেলে : ৩-৪-৩
- গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় : সার্হেজ মিলিঙ্কোভিচ-সাভিচ (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – লাজিও), ব্রানিস্লাভ ইভানোভিচ (সেন্টারব্যাক – জেনিত সেইন্ট পিটার্সবার্গ), আদেম লিয়ায়িচ (উইঙ্গার – তোরিনো), অ্যালেক্সান্দার মিত্রোভিচ (স্ট্রাইকার – নিউক্যাসল ইউনাইটেড), আলেক্সান্দার কোলারভ (লেফটব্যাক – এএস রোমা), দুসান তাদিচ (উইঙ্গার – সাউদাম্পটন), নেমানিয়া মাতিচ (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)
যে কোচ সার্বিয়াকে সাতবছর পর বিশ্বকাপে নিয়ে আসলো, সে কোচকেই বাছাইপর্ব শেষ হবার সাথে ছাঁটাই করে নতুন কোচকে নিয়ে এসেছে সার্বিয়া, স্লাভোলজুব মুসলিনের জায়গায় এসেছেন ম্লাদেন ক্রস্টাইচ, শুধুমাত্র স্টার মিডফিল্ডার সার্হেজ মিলিঙ্কোভিচ-সাভিচের কারণে। মিলিঙ্কোভিচ-সাভিচকে মুসলিন ঊল একাদশে রাখতেন না, ফলে তাকে চাকরিটাই খোয়াতে হয়। ৩-৪-৩ ফর্মেশানে খেলা সার্বিয়ার স্টাইলটা বেশ বিরক্তিকরই বটে। বিরক্তিকর হলেও, সার্বিয়ার জন্য প্রতিম্যাচে প্রত্যাশিত ফলাফল ঠিকই আনছে এই স্টাইল। বিশ্বকাপেও প্রত্যাশিত ফল আনতে পারে কি না, সেটাও সময়ই বলে দেবে!
সুইজারল্যান্ড :
- ফিফা র্যাংকিং : ৮
- কোচ : ভ্লাদিমির পেতকোভিচ
- অধিনায়ক : স্টেফান লিখস্টাইনার (রাইটব্যাক)
- বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ :১১ বার
- সর্বোচ্চ অবস্থান : কোয়ার্টার ফাইনাল (১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৫৪)
- যে স্টাইল/ফর্মেশানে খেলে : ৪-৫-১
- গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় : গ্রানিত শাকা (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – আর্সেনাল), স্টেফান লিখস্টাইনার (রাইটব্যাক – জুভেন্টাস), জের্দান শাকিরি (উইঙ্গার – স্টোক সিটি), আদমির মেহমেদি (স্ট্রাইকার – বেয়ার লেভারক্যুজেন), হারিস সেফেরোভিচ (স্ট্রাইকার – বেনফিকা)
সুইজারল্যান্ডের এই দলটার শক্তির দিকটা হল উইং। দুই কার্যকরী ফুলব্যাক স্টেফান লিখস্টাইনার ও রিকার্ডো রড্রিগেজের সাথে জের্দান শাকিরি বা ব্রিল এমবোলোর মত কার্যকরী উইঙ্গার, সাথে দলের খেলার গতি নির্ধারণ করে দেওয়ার মত সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার গ্রানিত শাকা, বেশ শক্তিশালীই বলা যায় দলটাকে। দলের দুর্বল কোন দিক থাকলে সেটা হল স্ট্রাইকিং পজিশান, মেহমেদি ও এমবোলো জ্বলে না উঠলে সেই হারিস সেফেরোভিচের উপরেই ভরসা রাখতে হবে।
কোস্টারিকা
- ফিফা র্যাংকিং : ২৬
- কোচ : অস্কার রামিরেজ
- অধিনায়ক : ব্রায়ান রুইজ
- বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ৪ বার
- সর্বোচ্চ অবস্থান : কোয়ার্টার ফাইনাল
- যে স্টাইল/ফর্মেশানে খেলে : ৫-৪-১
- গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় : কেয়লর নাভাস (রিয়াল মাদ্রিদ), ব্রায়ান রুইজ (উইঙ্গার – স্পোর্টিং লিসবন), জোয়েল ক্যাম্পবেল (স্ট্রাইকার – রিয়াল বেতিস), মার্কো ইউরেনা (স্ট্রাইকার – সান হোসে আর্থকোয়াকস), সেলসো বোর্গেস (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – দেপোর্তিভো লা করুনিয়া)
গত বিশ্বকাপে সবাইকে চমকে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা কোস্টারিকার এবারের দলটা সেই কেয়লর নাভাস, ব্রায়ান রুইজ, সেলসো বোর্গেস দের উপরেই নির্ভরশীল। গতবারের মত কোয়ার্টার ফাইনালে হয়তো উঠতে পারবেনা, তবে দলগত পারফরম্যান্স দিয়ে যেকোন দলকেই চমকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে তারা।
গ্রুপ থেকে যে দুই দল পরবর্তী রাউন্ডে উঠতে পারে : ১. ব্রাজিল ২. সুইজারল্যান্ড