

দক্ষিণ আফ্রিকা : এবি ডি ভিলিয়ার্স (অধিনায়ক), হাশিম আমলা, কাইল অ্যাবট, ফারহান বেহারডিয়েন, কুইন্টন ডি কক, জেপি ডুমিনি, ফ্যাফ ডু প্লেসি, ইমরান তাহির, ডেভিড মিলার, মরনে মরকেল, ওয়েইন পারনেল, অ্যারন ফাঙ্গিসো, ভারনন ফিল্যান্ডার, রাইলি রুশো, ডেল স্টেইন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ দলটার দিকে তাকালে আপনার যে জিনিসটাকে হাইলাইটস মনে হবে তা হলো দলে পাঁচ পাঁচজন স্পেশালিস্ট পেসার । যাদের সবাই মোটামুটি জোরে বল করতে পারেন এবং উইকেট প্রত্যাশামত বাউন্সি হলে একাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন । কাইল এবোট , মরনে মরকেল , ফিলান্ডার , পারনেল ও গতিতারকা ডেল স্টেইন । আধুনিক দক্ষিণ আফ্রিকা পেসারের সংকটে ভোগে নি কখনোই। শন পোলক আর এলান ডোনাল্ড থেকে এখনকার স্টেইন আর মরকেলের দক্ষিণ আফ্রিকা- সব সময়ই তাদের পেইস ইউনিট ছিলো বিশ্বের সেরা তিনটি পেইস ডিপার্টমেন্টের একটি । আর এই প্রাচুর্যের কারণেই হয়তো লোনোয়াবো সোসোবে , রায়ান ম্যাকলরেনদের মতো বোলারদের কাটা পড়তে হলো বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে যাদের উপমহাদেশের পাকিস্তান ছাড়া অন্য যে কোন দলই পেসার হিসাবে লুফে নিত।
এই পেইস আক্রমণের সবচাইতে শক্তির জায়গা সম্ভবত পেসারদের সবার উইকেট নেয়ার ক্ষমতা। ডেল স্টেইন তার ওডিআই ক্যারিয়ারে প্রতি উইকেটের জন্যে রান খরচা করেছেন ২৫ এর কিছু বেশি মাত্র, মরকেল ৩০ এর কাছাকাছি । আর সবচাইতে ঈর্ষণীয় বোলিং গড় ভারনন ফিলান্ডারের । ২২! এই বোলিং আক্রমণ রান বাঁচানোর দিকে ঝুকবে না । প্রতিপক্ষকে ৫০ ওভারের আগে অলআউট করার দিকে দৌঁড়াবে ।

স্পিনে আছেন ইমরান তাহির আর এরন ফাংগিসো । পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত এই লেগি অপ্রত্যাশিতভাবে ডাক পেয়ে গিয়েছিলেন ২০১১ সালের বিশ্বকাপ দলে । ইংলিশদের সাথে উইকেট পাবার পরে তার একটি সেলিব্রেশন খুব বিখ্যাত হয়ে যায় সে সময় । ৩৫ বছর বয়স । খুব অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে এটাই হতে যাচ্ছে ইমরান তাহিরের শেষ বিশ্বকাপ । শেন ওয়ার্নের দেশে খুব ভালো কিছু করতেই পারেন ইমরান তাহির । আর বাঁহাতি এরন ফাঙ্গিসোর অন্তর্ভুক্তি খুব সম্ভবত উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে পিচের বাউন্সকে কাজে লাগানোর জন্যে ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং শক্তির ফিরিস্তি যদি এতো লম্বা হয়, তাহলে একবার ভিলিয়ার্স আর আমলায় গড়া ব্যাটিং লাইন আপের কথা ভাবুন । প্রতিপক্ষ হলে আপনার গা ভয়ে শিরশির করে উঠবে । আধুনিক ক্রিকেটের সবচাইতে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা তো আছেনই , তার সাথে আছেন সদ্য টিনেজ পেরোনো উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডী কক । রিলি রুশো গুটিকয়েক ম্যাচে সুযোগ পেয়েই দেখিয়ে দিয়েছেন তাকে নিয়ে অনেক আগে থেকে চলে আসা মাতামাতিটা মোটেই বৃথা নয় । ডেভিড মিলার-ফ্যাফ ডু প্লেসিস আর ডুমিনির মিডল অর্ডার খুব সম্ভবত আক্রমণাত্নক ব্যাটিং এর জন্য এই বিশ্বকাপের সেরা মিডল অর্ডার কোনরকম সন্দেহ ছাড়াই । আর এই ব্যাটিং লাইন আপটার আরেকটা বড় ব্যাপার হলো ক্লাস আর পেশির যে কার্যকর মিশেল দক্ষিণ আফ্রিকা খুঁজে পেয়েছে , সেই কম্বিনেশনটা বোধহয় অন্য কারোরই নেই । আমলার মত ক্রিকেট ব্যাকরণের শুদ্ধ ছাত্র যেমন এই লাইনআপের প্রতিনিধি , ডেভিড মিলার আর ফ্যাফ ডু প্লেসিসের রক্তে শিহরণ জাগানো পাওয়ার ব্যাটসম্যানও একই দলের প্রতিনিধি ।

এত পূর্ণাঙ্গ একটি দলের ভার? হ্যাঁ । তিনি ভিলিয়ার্স । আব্রাহাম ডি ভিলিয়ার্স !
৩১ বলে ওডিআই হান্ড্রেড ! প্রতিপক্ষ দলগুলোকে ভালোমতোই একটা সংকেত দিয়ে রাখলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ানডে অধিনায়ক । ব্যাটিংটাকে প্রতি ইনিংসেই দিচ্ছেন নতুন মাত্রা । নতুনত্ব, নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আর ক্রিকেটের ব্যাসিকটাও ভালো মতো জানেন ভিলিয়ার্স ।
৫২ এর উপরে ব্যাটিং এভারেজ, ৯৭ স্ট্রাইক রেট ! ডি ভিলিয়ার্স আসলেই অন্য ধাতুতে গড়া । আকজন আক্রমনাত্মক অধিনায়কের হাতে স্কোয়াডে ৫ জন পেসার, পুরো ফিট আর শক্তিতে ভরপুর একটা ফিল্ডিং ইউনিট আর পোড় খাওয়া শক্তিশালী একটি ব্যাটিং সাইড । স্বপ্ন দেখতেই পারে দক্ষিণ আফ্রিকা !
চোকার ? পৃথিবীর সকল ধারারই শুরু হয় একদিন না একদিন শেষ হবার জন্য ।