
রাশিয়া বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে ২৩ সদস্যের মূল স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন – জার্মানি । বরাবরের মত এবারো হট ফেভারিট হিসেবে বিশ্বকাপে যাওয়া জার্মানি স্কোয়াডে সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হল ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে গোটা মৌসুম অসাধারণ খেলা উইঙ্গার লেরয় সানে’র না থাকা। এমনকি সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরষ্কারটিও গিয়েছিল এই সানের কাছেই। এর মাধ্যমেই বোঝা যায়, জার্মানি এর মূল দলে ঢোকার জন্য প্রতিভার কিরকম লাইন লেগে আছে! সানে থাকুন বা থাকুন, জার্মানির মূল স্কোয়াড যথারীতি তারকাবহুল। এক বছরেরও বেশী সময় ধরে পায়ের চোটের কারণে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল না খেলা জার্মানি অধিনায়ক ম্যানুয়েল নয়্যারকেও এই জার্মানি দলে যথারীতি রাখা হয়েছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক রাশিয়া বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে কোচ জোয়াকিম লো কাকে কাকে ২৩ সদস্যের স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করেছেন!
গোলরক্ষক
- ম্যানুয়েল নয়্যার – অধিনায়ক (বায়ার্ন মিউনিখ)
- মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন (বার্সেলোনা)
- কেভিন ট্র্যাপ (প্যারিস সেইন্ট জার্মেই)
ডিফেন্ডার
- জোশুয়া কিমিখ (বায়ার্ন মিউনিখ)
- ম্যাটস হামেলস (বায়ার্ন মিউনিখ)
- জেরোম বোয়াটেং (বায়ার্ন মিউনিখ)
- জোনাস হেক্টর (কোলন)
- মারভিন প্ল্যাটেনহার্ট (হার্থা বার্লিন)
- ম্যাথিয়াস জিন্টার (বরুশিয়া মনশেনগ্ল্যাডবাখ)
- নিকলাস সুলে (বায়ার্ন মিউনিখ)
- আন্তোনিও রুডিগার (চেলসি)
মিডফিল্ডার
- টোনি ক্রুস (রিয়াল মাদ্রিদ)
- স্যামি খেদিরা (জুভেন্টাস)
- মেসুত ওজিল (আর্সেনাল)
- জুলিয়ান ড্র্যাক্সলার (প্যারিস সেইন্ট জার্মেই)
- মার্কো রয়েস (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড)
- টমাস মুলার (বায়ার্ন মিউনিখ)
- লিওন গোরেৎজকা (বায়ার্ন মিউনিখ)
- সেবাস্তিয়ান রুডি (বায়ার্ন মিউনিখ)
- ইলকায় গুন্ডোগান (ম্যানচেস্টার সিটি)
- জুলিয়ান ব্র্যান্ট (বেয়ার লেভারক্যুজেন)
স্ট্রাইকার
- মারিও গোমেজ (ভিএফবি স্টুটগার্ট)
- টিমো ওয়ার্নার (র্যাসেনবলস্পোর্ত লাইপজিগ)
যারা জায়গা পাননি
- বার্নড লেনো (গোলরক্ষক – বেয়ার লেভারক্যুজেন)
- জোনাথান তাহ (সেন্টারব্যাক – বেয়ার লেভারক্যুজেন)
- লেরয় সানে (উইঙ্গার – ম্যানচেস্টার সিটি)
- শকোদ্রান মুস্তাফি (সেন্টারব্যাক – আর্সেনাল)
- এমরে চ্যান (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার – লিভারপুল)
- আমিন ইউনেস (উইঙ্গার – আয়াক্স আমস্টারডাম)
- বেঞ্জামিন হেনরিখস (লেফটব্যাক – বেয়ার লেভারক্যুজেন)
- মারিও গতসা (অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার – বরুশিয়া ডর্টমুন্ড)
- অ্যান্দ্রে শুরলা (উইঙ্গার – বরুশিয়া ডর্টমুন্ড)
- স্যান্দ্রো ওয়াগনার (স্ট্রাইকার – বায়ার্ন মিউনিখ)
- লার্স স্টিনডল (স্ট্রাইকার – বরুশিয়া মনশেনগ্ল্যাডবাখ)
ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে মাঠ মাতালেও মূলত জার্মানি কোচ জোয়াকিম লো এর ট্যাকটিক্সে কখনই লেরয় সানে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। যেটার সাম্প্রতিক প্রমাণ দুইদিন আগে অস্ট্রিয়ার সাথে জার্মানির ম্যাচটা, যেখানে জার্মানি ২-১ গোলে হেরে যায়। লেরয় সানে সেই ম্যাচে জঘন্য খেলেছেন। যদিও এই মৌসুমে জার্মান খেলোয়াড়দের মধ্যে গোল করা ও গোল সহায়তা মিলিয়ে লেরয় সানেই এগিয়ে রয়েছেন সবচেয়ে বেশী (১৪ গোল, ১৯ অ্যাসিস্ট)। লেরয় সানে এর জায়গায় বেয়ার লেভারক্যুজেনের জুলিয়ান ব্র্যান্টকেই বেশী মনে ধরেছে জোয়াকিম লো এর।

ওদিকে জার্মানির গোলবার সামলাবেন যথারীতি ম্যানুয়েল নয়্যার। পায়ের ইনজুরির জন্য গত এক বছরে জাতীয় দল ও বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে মাত্র দুটো ম্যাচ খেলা নয়্যারকে নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছিল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিয়ে, বলা হচ্ছিল হয়তোবা এই বিশ্বকাপে জার্মানির মূল গোলরক্ষক হবেন বার্সেলোনার হয়ে ভালো মৌসুম কাটানো মার্ক অ্যান্দ্রে টের স্টেগেন। কিন্তু সব সংশয়কে উড়িয়ে দিয়ে নয়্যারই হচ্ছেন জার্মানির নাম্বার ওয়ান।
প্রত্যেকটা জায়গায় প্রতিভাবান খেলোয়াড় থাকলে যা হয়, একাধিক ফর্মেশনে খেলতে স্বচ্ছন্দ জার্মানি। তবে এই বিশ্বকাপে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে দলকে খেলাতে পারেন জোয়াকিম লো, গত বিশ্বকাপের মত। সেক্ষেত্রে চারজনের ডিফেন্সে রাইটব্যাক হিসেবে থাকবেন বায়ার্ন মিউনিখের জোশুয়া কিমিখ, যাকে অনেকেই পরবর্তী “ফিলিপ লাম” বলে আখ্যা নিয়ে দিয়েছেন। স্কোয়াডে কিমিখের বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে ম্যাথিয়াস জিন্টারকে, যদিও জিন্টার অভিজ্ঞ রাইটব্যাক নন, ক্লাব দল বরুশিয়া মনশেনগ্ল্যাডবাখের হয়ে সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলা জিন্টার মাঝে মধ্যে রাইটব্যাক হিসেবেও খেলতে পারেন – এটাই। ওদিকে লেফটব্যাক হিসেবে কোলনের জোনাস হেক্টরের জায়গা পাকা, তাঁর বিকল্প হিসেবে দলে আছেন হার্থা বার্লিনের লেফটব্যাক মারভিন প্ল্যাটেনহার্ট।
সেন্টারব্যাক হিসেবে জুটি বেঁধে খেলার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশী বায়ার্ন মিউনিখের দুই সেন্টারব্যাক ম্যাটস হামেলস ও জেরোম বোয়াটেং এর। যদিও বোয়াটেং এর সাম্প্রতিক ইনজুরির কারণে জোয়াকিম লো চাইলে দলে থাকা বিকল্প দুই সেন্টারব্যাক নিকলাস সুলে বা আন্টনিও রুডিগারও খেলতে পারেন।
দুইজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেলার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশী রিয়াল মাদ্রিদের টোনি ক্রুস ও জুভেন্টাসের স্যামি খেদিরার। দলে বিকল্প সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে আরও নেওয়া হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটির ইলকায় গুন্ডোগান, বায়ার্ন মিউনিখের দুই খেলোয়াড় সেবাস্তিয়ান রুডি ও লেওন গোরেৎজকাকে। সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে আর্সেনালের মেসুত ওজিলের জায়গা পাকা। তাঁকে মাঝে রেখে দুই উইংয়ে খেলতে পারেন মার্কো রয়েস ও টমাস মুলার। রয়েস ও মুলারের জায়গায় যেকোন মুহূর্তে ঢুকে যেতে পারেন দুই জুনলিয়ানের যেকোন একজন – ব্র্যান্ট আর ড্র্যাক্সলার। মূল একাদশে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলবেন র্যাসেনবলস্পোর্ত লাইপজিগের টিমো ওয়ার্নার। তাঁর বিকল্প হিসেবে দলে আছেন ভিএফবি স্টুটগার্টের অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার মারিও গোমেজ।
এই স্কোয়াড নিয়েই বিশ্বকাপ রক্ষার অভিযানে যাচ্ছে জার্মানি। কেমন লাগলো জোয়াকিম লো এর এই স্কোয়াডকে? জানিয়ে দিন আমাদের!
স্কোয়াড প্রিভিউ দেখুন আরও –
- ইংল্যান্ড
- আইসল্যান্ড
- ব্রাজিল
- কোস্টারিকা
- সুইডেন
- ফ্রান্স
- পর্তুগাল
- সেনেগাল
- মরক্কো
- আর্জেন্টিনা
- স্পেইন
- জাপান
- উরুগুয়ে
- সার্বিয়া